আজ বৃহস্পতিবার, ১৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২রা জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

মাদক ব্যবসার সহযোগিতায় শামীম ওসমানের শ্যালক টিটু!

নিজস্ব প্রতিবেদক
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লা পাগলা এলাকায় বুড়িগঙ্গা নদীতে ভাসমান রেস্তোরাঁ ‘মেরি এন্ডারসনে’ অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমান বিদেশী মদ ও বীয়ার সহ ৬৮ জনকে আটক করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। এই অবৈধ মাদক ব্যবসার পৃষ্ঠপোষক তানভীর আহম্মেদ টিটু এমনটাই প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানিয়েছে গ্রেফতারকৃতরা।

মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) দুপুরে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. মনিরুল ইসলাম এক প্রেস ব্রিফিংয়ে গণমাধ্যমে এ তথ্য জানান।
জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের কাছে সরবরাহকৃত এক লিখিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গ্রেফতার হওয়া মেরিন্ডারসনের স্টাফদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, উক্ত বারের মালিক সঞ্চয় রায় জনৈক তানভীর আহম্মেদ টিটুর সহযোগিতায় নারায়ণগঞ্জ ক্লাবসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অবৈধভাবে দীর্ঘদিন যাবৎ মাদকদ্রব্য সংগ্রহ করে জাহাজে রেখে অবৈধভাবে মাদক ব্যবসা করে আসছে। এই বারের একাধিক পার্টনার রয়েছে বলেও জানা গেছে।
তবে বারের মালিক সঞ্চয় রায় ও তানভীর আহম্মেদ টিটুর কোন পরিচয় উল্লেখ করা হয়নি। এ বিষয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের এক প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এই দুই জনের নাম আমরা জানতে পেরেছি। এ ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। মামলায় গ্রেফতারকৃতদের ছাড়াও অজ্ঞাত আরো কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। তদন্ত করার পর সঞ্চয় রায় ও তানভীর আহম্মেদ টিটুর পরিচয় জানা যাবে। এর নেপথ্যে কারা তাদেরও খুজে বের করা হবে।

এদিকে তানভীর আহম্মেদ টিটু জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ একেএম শামীম ওসমানের শ্যালক । তানভীর আহমেদ টিটু নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সাবেক সভাপতি।

তবে মাদক ব্যবসার সহযোগিতার অভিযোগের ব্যাপারে তানভীর আহমেদ টিটুর কোন বক্তব্য পাওয়া যায় নি।

এছাড়া মেরিএন্ডারসনে পুলিশের অভিযানের ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার সকালে পুলিশ বাদী হয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা দায়ের করেছে ।
মামলার আসামীরা হলেন, ডিএমপির ওয়ারী থানার মৃত. ছামাদ হোসেনের ছেলে মো. মনির হোসেন (৪৯), বি-বাড়ীয়ার পাড়াতলীর মৃত ফিরোজ মিয়া মেম্বারের ছেলে আবুল কালাম আজাদ (৪৮), কদমতলী থানার জাহী ছাবেদ আলীর ছেলে সোহেল রানা (৩৮), বরগুনার নাপিতখালীর আব্দুল মিনহাজ গাজীর ছেলে সারোয়ার (২৬), নীলফামারীর চান্দাখানা এলাকার শহিদুল ইসলামের ছেলে মনোয়ার (৪০), ফতুল্লার মাসদাইর গুদারাঘাট এলাকার মৃত হালিম খানের ছেলে মো. মনির (৩৫), পঞ্জবটি শাসনগাঁও এলঅকার হাজী আমিনুল হক বেপারীর ছেলে জিয়াউর রহমান (৩৫), বরগুনা বামনা থানার আনছার আলীর ছেলে মো. হারিছ (২৫), দক্ষিন কেরানীগঞ্জের দোলেশ্বর গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে সাব্বির হোসেন, একই এলাকার শওকত আলীর ছেলে মো. সোবহান (২৫), ইউসুফ মিয়ার ছেলে ইকবাল হোসেন (৩৫), ঈশ্বররদীর রূপপুর এলাকার সিরাজুল ইসলামের ছেলে সজল হোসেন (২৪), বরিশালের মুলাদিয়ার আজিজ শিকদারের ছেলে মো. মহিবুল্লাহ (৩০), ফতুল্লার পূর্ব শিয়ারচর লালখাঁ এলাকার ইবু হোসেনের ছেলে মো. সজল (২৫), একই এলাকার পলাশ আহমেদের ছেলে রাকিব (২৩), মো. রওশন আলী মীরের ছেলে মো. রাফিকুল ইসলাম (২৪), পাগলা শাহী বাজার এলাকার কাজী আব্দুল মান্নানের ছেলে কাজী মোস্তফা (৩০), পাগলার রসুলপুরের আমির হোসেন সরকারের ছেলে জাহিদ হাসান (৩২), পাগলার শাহী মসজি এলাকার আব্দুল আলীম মিয়া হলেন ছেলে মাহাবুব আলী (৩৬), সৈয়দপুর ফকিরবাড়ির মনির হোসেনের ছেলে হাবিবুর রহমান (৩৪), ফতুল্লার ধর্মগঞ্জের মোহাম্মদ আলীর ছেলে রাজু (২৫), কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ এলাকার আব্দুল বারিক মিয়ার ছেলে জাহাঙ্গীর আলম (৪০), চাঁদপুর উত্তর মতলবের জহিরুল ইসলামের ছেলে নজরুল ইসলাম, আলীগঞ্জ এলাকার নাজিন মিয়ার ছেলে ইমরান (৩০), পটুয়াখালীর গলাচিপা এলাকার মিনহাজ শিকদারের ছেলে জসিম শিকদার (৩৫), আলীগঞ্জের আহসান উল্লাহর ছেলে জুম্মন (৩২), মাসদাইর গুদারাঘাটের মৃত আহী আবু সাঈদ মিয়ার ছেলে মাহবুব আলম বাধন (২৮), কালীগঞ্জের খলাপ৪াড়ার মনোরঞ্জন ভক্তর ছেলে শুভ ভক্ত (৩৩), নারায়ণগঞ্জের হাজী সুপার মার্কেটের নারায়ণগঞ্জ চন্দ্র সাহার ছেলে রনি কুমার সাহা (৩৪), দক্ষিন কেরানীগঞ্জের লাট মিয়ার ছেলে সিদ্দিকুর রহমান (২৪), সিদ্ধিরগঞ্জের কদমতলী নয়াপাড়ার আব্দুর সালামের ছেলে মো. হেলাল (২৫), কুমিল্লার হোমনা থানার রফেজ মিয়ার ছেলে জহির (৩৪), বন্দরের বাবুপাড়া এলাকার তাইজুদ্দিনের ছেলে জুয়েল রানা (৩৮), ফতুল্লার মাসদাইর এলাকার আব্দুল কুদ্দুস মিয়ার ছেলে কাউছার আহম্মেদ (৩৫), আদমজী নাভানা সিটির নুর ইসলামের ছেলে নুর মোহাম্মদ (২৬), পাগলা শাহী মহল্লার ইউনুস মিয়ার ছেলে শাহাদাৎ (২৮), ফতুল্লার আজমেরীবাগের রশিদ তালুকদারের ছেলে শাহাদাৎ (২৮), গোগনগরের আবুল হাসেমের ছেলে মাসুম (২৮), সৈয়দপুরের নজরুল ইসলামের ছেলে শাহ আলম, বন্দর মধ্যপাড়ার সুধাংশু চন্দ্র দে এর ছেলে সুশান্ত চন্দ্র দে (৩৫), চাঁদপুর উত্তর মতলব এলাকার সাগর মুন্সির ছেলে ইসরাফিল (১৮), ধর্মগঞ্জের হাজী গিয়াসউদ্দিন মিয়ার ছেলে রুবেল (৩২) ও নেত্রকোনার কেন্দুয়ার হাছেন আলীর ছেলে শেখ তোফাজ্জল হোসেন (৩৯)।
এছাড়া গ্রেপ্তারকৃত মেরিএ্যান্ডারসন’র স্টাফরা হলেন ঝালকাঠি জেলার মৃত শামসুদ্দিন হাওলাদারের ছেলে মো. হান্নান হাওলাদার (৩১), নড়াইল লোহাগড়ার মৃত আব্দুর রশিদ খাঁনের ছেলে মো. রেজাউল করিম (৫০), মন্সিগঞ্জের উত্তর সিপাহীপাড়ার মৃত আব্দুল কাদির মিয়ার ছেলে মুনসুর আহম্মেদ (৩৫), ভোলার সাচিয়া গ্রামের তাজুল ইসলামের ছেলে মো. কবির (৩৩), বরিশাল বাকেরগঞ্জের দুর্গাপুর এলাকার নাসির উদ্দিন মোল্লার ছেলে মামুন (৪৭), পিরোজপুর ভাটিভাঙ্গা থানার হালিম হাওলাদারের ছেলে কাউসার আহম্মেদ (১৯), লক্ষীপুর রামগঞ্জের উত্তর গ্রামের মৃত. এমদাদ উল্লাহর ছেলে আব্দুর রাজ্জাক (৩৮), নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের সিরাজপুর এলাকার নুরুল আফছার মিয়ার ছেলে মো. হারুন (২১), বরিশালের বটতলার মৃত সৈয়দ আব্দুর লতিফের ছেলে ফিরোজ মোস্তফিজ (৪৭), বরিশালের হিজলা এলাকার সেকান্দর সরদারের ছেলে মোক্তার হোসেন (২৬), বরিশালের উজিরপুরের এনায়েত করিমের ছেলে মিঠু (২৪), ভোলার রুহিতা গ্রামের আবুল কালামের ছেলে আমজাদ (২০), নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের নুরুল আফছারের ছেলে শুভ (১৮), রাঙ্গামাটির মোদিকাছড়ি গ্রামের থোইসেউ মারমার ছেলে উথোইচিং মারমা (২২), চাঁদপুর ফরিদগঞ্জের শফিকুর রহমানের ছেলে জিয়াউর রহমান, ভোলার মৌটুপি এলাকার মৃত. ফিরোজ মিয়ার ছেলে মো. সুমন (২৭), নড়াইল লোহাগড়ার ফরহাদ শেখের ছেলে শেখ নয়ন (২২), ফরিদপুর শালথার মৃত. মঙ্গল শরীফের ছেণে হাসিবুল (৪০), খুলনার নিরালার শেখ সুলতান আহমেদের ছেলে শেখ জনি (২৮), নাটোর বড়াইগ্রামের বার্নাট রোজারিও এর ছেলে হিমেল রোজারিও (২০), চাঁদপুর মতলবের আব্দুল মালেক মিয়ার ছেলে শাকিল হোসেন (২৩), ডিএমপির উত্তরখাঁন এলাকার জাভেদ হোসেনের ছেলে সাইফুল ইসলাম রকি (২৯), বরিশাল হিজলা এলাকার ইব্রাহিম বরকান্দাজের ছেলে সবুজ (২২), পাবনার চাটমোহন এলাকার মৃত. ফ্রান্সিস বস্তার ছেলে পংকজ (২০), শরিয়তপুর ডামুড়ার ঠ্গোরবাড়ী এলাকার আলী আশরাফ মিয়ার ছেলে রফিকুল ইসলাম (৪০)।
এছাড়া গতকাল এক প্রেস ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম বলেন, জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ, বিপিএম (বার), পিপিএম (বার) সন্ত্রাস, মাদক, ঝুট সন্ত্রাস, ভূমি দস্যুদের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেছেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সোমবার রাতে ফতুল্লার পাগলা এলাকায় অবস্থিত ভাসমান রেস্টুরেন্ট ও বার মেরিএন্ডারসনে ডিবি ও ফতুল্লা থানা পুলিশ মাদক বিরোধী যৌথ অভিযান চালিয়ে মেরিএন্ডারসনের স্টাফসহ মাদক সেবনরত অবস্থায় ৬৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ সময় ৪২ বোতল বিদেশী মদ, ৭৫ বোতল দেশী কেরো মদ, বিভিন্ন প্রকারের ১৯২০ ক্যান বিয়ার ও মাদক বিক্রির ৪৮ হাজার ৯৩০ টাকা উদ্ধার করা হয়। এ বিষয়ে মেরিএন্ডারসনের স্টাফরা কোন বৈধ কাগজপত্র কিংবা পারমিট দেখাতে পারেনি।

তিনি জানান, গ্রেফতার হওয়া ৬৮ জন আসামিদের মধ্যে ২৫ জন মেরিএন্ডারসনের স্টাফ এবং বাকি ৪৩ জন মাদক সেবনরত অবস্থায় গ্রেফতার হয়েছে। মাদক সেবনকারীদের লাইসেন্স থাকতে হয়। কিন্তু গ্রেফতারকৃত মাদক সেবনকারীরা কোন প্রকার লাইসেন্স কিংবা মেডিক্যাল প্রেসক্রিপশন দেখাতে পারেনি।

লিখিত প্রেস ব্রিফিংয়ে বলা হয়েছে, গ্রেফতার হওয়া মেরিন্ডারসনের স্টাফদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, উক্ত বারের মালিক সঞ্চয় রায় জনৈক তানভীর আহম্মেদ টিটুর সহযোগিতায় নারায়ণগঞ্জ ক্লাবসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অবৈধভাবে দীর্ঘদিন যাবৎ মাদকদ্রব্য সংগ্রহ করে জাহাজে রেখে অবৈধভাবে মাদক ব্যবসা করে আসছে। এই বারের একাধিক পার্টনার রয়েছে বলেও জানা গেছে।

এ বিষয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের এক প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এই দুই জনের নাম আমরা জানতে পেরেছি। এ ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। মামলায় গ্রেফতারকৃতদের ছাড়াও অজ্ঞাত আরো কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। তদন্ত করার পর সঞ্চয় রায় ও তানভীর আহম্মেদ টিটুর পরিচয় জানা যাবে। এর নেপথ্যে কারা তাদেরও খুজে বের করা হবে।

তবে এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় বারের মালিক সঞ্চয় রায়কে এজাহারভুক্ত আসামি করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

রাতে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আটক ৭০ জন জানানো হলেও গ্রেফতার ৬৮ জন দেখানো হয়েছে গণমাধ্যমকর্মীদের এ প্রশ্নের জবাবে মনিরুল ইসলাম বলেন, এটা একটা বড় অভিযান। এসব বিষয় আমরা সাথে সাথে সাংবাদিকদের জানিয়ে দেয়ার চেষ্টা করি। দ্রুততার কারণে হয়তো ওই সময় রাফলি ৭০ জন বলা হয়েছে।